রাজনৈতিক, ধর্মীয়, শিক্ষা, ক্রীড়া, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ও মানবিক অনুষ্ঠান প্রচার মাধ্যম।

বাংলাদেশের মৌসুমী ফল : পুষ্টি ও অর্থনীতির সম্ভাবনা

মোফাজ্জল হোসেন বিশেষ প্রতিনিধিঃ বাংলাদেশ একটি কৃষিনির্ভর দেশ। এর উর্বর মাটি, অনুকূল জলবায়ু এবং বৈচিত্র্যময় ঋতুর কারণে এখানে নানান প্রকার মৌসুমী ফলের চাষ হয়। দেশজুড়ে ছড়িয়ে থাকা এই ফলগুলো শুধু স্বাদের দিক থেকেই নয়, পুষ্টিমান ও অর্থনৈতিক গুরুত্বের দিক থেকেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিবছর ফলের মৌসুমে বাংলাদেশে এক মনোরম ও বর্ণিল পরিবেশের সৃষ্টি হয় যা আমাদের সংস্কৃতির এক অনন্য অংশ। মৌসুম অনুযায়ী ফল বাংলাদেশে ছয়টি ঋতুর প্রতিটি ঋতুর সঙ্গেই নির্দিষ্ট কিছু ফলের সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। গ্রীষ্মকাল (এপ্রিল-জুন) মৌসুমী ফলের জন্য সবচেয়ে সমৃদ্ধ। এই সময়ে আম, কাঁঠাল, লিচু, তরমুজ, বাঙ্গি, জাম, কামরাঙ্গা, তাল প্রভৃতি ফলে বাজার ভরে যায়। এর মধ্যে আম, কাঁঠাল ও লিচু ‘ত্রিশ রত্ন’ নামে পরিচিত। বর্ষাকালে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) বাজারে দেখা যায় আনারস, কলা, পেয়ারা, পেঁপে, আমড়া ইত্যাদি ফল। শরৎ, হেমন্ত ও শীতকালেও নানা রকম ফল পাওয়া যায়, যেমন—কমলা, মাল্টা, বেল, ডালিম, সফেদা, আতাফল ও খেজুর। মৌসুমী ফল পুষ্টির আধার। এগুলোতে থাকে ভিটামিন, খনিজ, আঁশ, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং প্রাকৃতিক চিনি যা শরীরের জন্য উপকারী। যেমন: আম: এতে ভিটামিন ‘এ’ ও ‘সি’ থাকে, যা চোখের দৃষ্টিশক্তি ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। কাঁঠাল: প্রোটিন ও ভিটামিন ‘বি’-সমৃদ্ধ, যা শক্তি জোগায়। লিচু: আয়রন ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ, যা রক্তশূন্যতা দূর করতে সহায়তা করে। পেয়ারা: ভিটামিন ‘সি’-এর ভাণ্ডার, যা ত্বক ও দাঁতের জন্য উপকারী। সাধারণত মৌসুমী ফল কম দামে পাওয়া যায় এবং রাসায়নিক মুক্ত হলে এগুলো স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মৌসুমী ফল শুধু পুষ্টির উৎস নয়, বরং দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। বাংলাদেশে প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ মেট্রিক টন মৌসুমী ফল উৎপন্ন হয়। রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, দিনাজপুর, যশোর, নরসিংদী, টাঙ্গাইল, সিলেট, ও পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল ফল উৎপাদনের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। বিশেষ করে আম, লিচু ও পেয়ারা রপ্তানি করে বাংলাদেশ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে। এছাড়াও ফল সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও পরিবহনের মাধ্যমে কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে। যদিও ফল উৎপাদনে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে, তবে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়ে গেছে। যেমন: ফল সংরক্ষণের আধুনিক ব্যবস্থা না থাকা রাসায়নিক ব্যবহারের ঝুঁকি প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফল নষ্ট হওয়া কৃষকদের ন্যায্য মূল্য না পাওয়া এসব সমস্যা মোকাবেলায় ফল চাষে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, কৃষক প্রশিক্ষণ, রাসায়নিকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ ও হিমাগার স্থাপন জরুরি। এছাড়াও স্থানীয়ভাবে ফল প্রক্রিয়াকরণ ও রপ্তানি ব্যবস্থার উন্নয়নও সময়োপযোগী পদক্ষেপ। বাংলাদেশের মৌসুমী ফল শুধু খাদ্য ও পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে না, বরং একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠীর জীবিকা, সংস্কৃতি ও অর্থনীতির সঙ্গে গভীরভাবে সম্পৃক্ত। সঠিক ব্যবস্থাপনা, পরিকল্পনা ও পরিবেশবান্ধব কৃষিনীতির মাধ্যমে এই খাতকে আরও সমৃদ্ধ করা সম্ভব। মৌসুমী ফল বাংলাদেশের জন্য একটি সম্ভাবনাময় সম্পদ—যার যথাযথ ব্যবহার দেশের উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারে।

বাংলাদেশ জোড়ে

বরগুনার কুয়েত প্রবাসী হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে জরায়ু অপসারণের সময় পেটে ৭ ইঞ্চি একটি কাঁচি রেখে সেলাই দিয়েছিলেন চিকিৎসকরা। সাত...